দেশের বাজারে আবারও সোনার দাম নতুন রেকর্ড গড়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) কর্তৃক নির্ধারিত নতুন মূল্য অনুযায়ী, এখন থেকে এক ভরি ২২ ক্যারেট সোনা বিক্রি হবে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকায়। এই মূল্য দেশের ইতিহাসে সোনার সর্বোচ্চ দাম, যা বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতা সবার জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর।
গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সোনার দাম ভরিতে ৩ হাজার ১৩৭ টাকা বাড়ানোর মাত্র চার দিনের মাথায় এই নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হলো। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই এই দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাজুস।
সোনার দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে কী?
বাজুস তাদের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এই মূল্য সমন্বয়ের কারণ হিসেবে স্থানীয় বাজারে বিশুদ্ধ সোনার (পিওর গোল্ড) মূল্য বৃদ্ধিকে উল্লেখ করেছে। তবে এর পেছনে রয়েছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক কারণ। চলমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির চাপ, এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ বাড়াতে সোনা কেনার প্রবণতা – এই সবকিছুই সোনার দামকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু দেশের বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই বৈশ্বিক এই প্রভাব সরাসরি এখানেও দেখা যাচ্ছে।
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে কার্যকর নতুন সোনার দাম
নিচে বিভিন্ন ক্যারেটের সোনার নতুন দাম প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) হিসেবে উল্লেখ করা হলো। মনে রাখা জরুরি যে, এই দামের সাথে আবশ্যিকভাবে ভ্যাট এবং মজুরি যোগ করতে হবে।
- ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি: ১,৮৫,৯৪৭ টাকা
- ২১ ক্যারেট প্রতি ভরি: ১,৭৭,৫০৩ টাকা
- ১৮ ক্যারেট প্রতি ভরি: ১,৫২,১৪৫ টাকা
- সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি: ১,২৬,১৪৬ টাকা
গহনা কেনার সময় অতিরিক্ত খরচ
সোনার গহনা কেনার সময় মূল দামের পাশাপাশি ক্রেতাকে দুটি প্রধান অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়:
- সরকার নির্ধারিত ভ্যাট: গহনার মোট দামের উপর ৫% ভ্যাট যোগ করা হয়।
- মজুরি: বাজুস নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬% যোগ করা হয়। তবে গহনার ডিজাইন এবং কারুকার্যের ভিন্নতার কারণে মজুরি এর চেয়ে বেশি হতে পারে।
উল্লেখ্য, সোনার দাম বাড়ানো হলেও রুপার দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বর্তমানে দেশে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮১১ টাকায়।
ভবিষ্যতের পূর্বাভাস: সোনার দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কি অব্যাহত থাকবে?
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিনিয়োগ ব্যাংকগুলো সোনার দাম নিয়ে ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে। জেপি মরগান, গোল্ডম্যান স্যাকস, এবং এএনজেড গ্রুপ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, সোনার এই দাম বৃদ্ধি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা (bullish trend), যা আগামী ২০২৬ সালেও বজায় থাকতে পারে।
কেন এই ঊর্ধ্বগতি?
১. ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা: বিশ্বজুড়ে চলমান সংঘাত এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছে।
২. কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রয়: বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিশেষ করে চীনের মতো দেশগুলো, তাদের রিজার্ভে ডলারের পরিবর্তে সোনা যোগ করছে। এটি সোনার চাহিদা ও দাম বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
৩. মুদ্রাস্ফীতির ভয়: ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি থেকে নিজেদের সম্পদ রক্ষা করতে বিনিয়োগকারীরা সোনাকে একটি নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে দেখছে।
৪. দুর্বল মার্কিন ডলার: মার্কিন ডলার দুর্বল হলে অন্যান্য মুদ্রার মান বাড়ে এবং সোনার দাম আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২৬ সালেও ডলারের এই দুর্বলতা বজায় থাকতে পারে।
বিশ্লেষকদের এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে সোনার দাম নতুন নতুন রেকর্ড গড়তে পারে। এর প্রভাব দেশের বাজারেও পড়বে। তাই ক্রেতা ও বিনিয়োগকারী উভয়কেই সতর্ক থাকতে হবে এবং বাজারের সর্বশেষ গতিবিধির দিকে নজর রাখতে হবে।
0 Comments